মোঃ জহিরুল হক বাবু।।
প্রতারণার মাধ্যমে কয়েক লক্ষ টাকা আত্মসাৎকারী মোঃ রবিউল হোসেন প্রকাশ্যে জ্বীনের কবিরাজ রবিউলকে আটক করেছে র্যাব। রোববার দুপুরে র্যাব-১১ কুমিল্লা ক্যাম্পে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানানো হয়।
র্যাব জানায়, গত বছরের ৯ সেপ্টেম্বর চাঁদপুর জেলা সদরের মোসাম্মৎ ইভা নামে এক নারীর কাছে অপরিচিত একটি নাম্বার থেকে কয়েকবার কল আসে। কলটি রিসিভ করলে অপর প্রান্ত হতে একটি যুবক জানায় তার নাম জ্বীনের কবিরাজ এবং সে সকল প্রকার সমস্যার সমাধান দিতে জানে।
তার পরিবারে নানাবিধ সমস্যা রয়েছে। এই সমস্যাগুলো সমাধান কল্পে জ্বীনের কবিরাজের স্বরনাপর্ণ হতে পারে, তবে এই কবিরাজকে তিনি দেখতে পাবেন না কারণ লোকালয়ে সে হাজির হয় না।
পরবর্তীতে কবিরাজ ভ‚ক্তভোগীর অগোচরে তার এলাকায় গিয়ে পারিবারিক সমস্যা, স্বামী কি করে, কোথায় থাকে এবং বাড়ীর পারিপাশ্বিক অবস্থান জেনে সে বুঝতে পারে এই মহিলাকে আয়ত্বে আনতে পারলে সে অর্থনৈতিকভাবে অনেকটা লাভবান হবে।
পরবর্তীতে কল দিয়ে উক্ত কবিরাজ ওই নারীর সাথে ফোনালাপে ভালো সম্পর্ক গড়ে তোলে আস্থা ও বিশ্বাস অর্জন করেন।
বিশ্বাস অর্জনের ফলে কবিরাজ সিলেটের জৈন্তাপুর নামক ঠিকানা (ভ‚য়া ঠিকানা) হতে কুরিয়ারের মাধ্যমে ৫টি তাবিজ প্রেরণ করে। উক্ত কবিরাজ বলেন তার কাছে জ্বীন আছে, সে ৪/৫ টা জ্বীন পালন করে এবং তার কাছে সবসময় জ্বীন থাকে।
ওই নারীর সৌদি প্রবাসি স্বামীর শারিরীক সম্যস্যার সমাধান করতে হলে জ্বীনদেরকে দিতে হবে ১ লক্ষ পাঞ্জাবী এবং ১ লক্ষ টুপি, না দিলে তার স্বামী ও সন্তান মারা যাবে বলে ভয় দেখায়। কবিরাজ আরো বলে তাদের বাড়ীতে বদজ্বীনের নজর পড়েছে, বদজ্বীন থেকে মুক্ত হতে হলে ভ‚ক্তভোগীকে গরু, মহিষ, শুকুর বলি দিতে হবে।
ওই নারী সরল মনে স্বামীর শারিরীক সমস্যা সমাধান, সন্তানদের সুস্থ্যতার জন্য বিভিন্ন সময় বিকাশের মাধ্যমে কবিরাজকে বিভিন্ন ধাপে ৫ লাখ ৫১হাজার টাকা প্রদান করেন।
সর্বশেষ গত বছরের ১৬ নভেম্বর ওই নারীকে এক লক্ষ টাকা দিতে বলে, টাকা দিতে না পারলে তার স্বামী দেশের বাহিরে মারা যাবে এমন একটি কথা বলে সর্বশেষ এক লক্ষ টাকা বিকাশের মাধ্যমে গ্রহণ করে।
ওই টাকা প্রেরণের ২-৩দিন ওই নারীর স্বামী শারিরীকভাবে সুস্থ না হলে তিনি বারংবার বিভিন্ন নাম্বারে উক্ত কবিরাজকে ফোন করে সবগুলো নাম্বার বন্ধ পেয়ে সে বুঝতে পারে সে প্রতারিত হয়েছেন। অতঃপর ওই নারী বিষয়টি পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের সাথে আলোচনা করে সিলেটের জৈন্তাপুর গিয়ে এই কবিরাজকে খুজে এবং সেখানে এই ধরনের নামের কাউকে না পেয়ে তাহারা পুনরায় ফেরত আসে।
পরবর্তীতে ওই নারী এলাকার মানুষের কাছে জানতে পারে র্যাবের মাধ্যমে বিষয়টির সমাধান পাবে, সে প্রেক্ষিতে গত ২ ফেব্রæয়ারি র্যাব-১১, সিপিসি-২, কুমিল্লা তে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।
অভিযোগের প্রেক্ষিতে ছায়া তদন্ত শুরু করে র্যাব-১১, সিপিসি-২। গোয়েন্দা তৎপরতা এবং তথ্যপ্রযুক্তির সাহায্যে ১২ জানুয়ারি বিকেল ৫ টায় চট্টগ্রাম জেলার জোরারগঞ্জ থানাধীন মধ্যম সোনাপাহাড় এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে জ্বীনের কবিরাজ মোঃ রবিউল হোসেন প্রকাশ্যে জ্বীনের কবিরাজ’কে আটক করে।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে মোঃ রবিউল হোসেন প্রকাশ্যে জ্বীনের কবিরাজ এর কাছ থেকে বেরিয়ে আসে চাঞ্চল্যকর সব তথ্য। মূলত সে বেদে সম্প্রদায়ের সদস্য হওয়ায় তাবিজ এবং ঝার-ফুকের মাধ্যমে দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন এলাকার লোকের সাথে সুসম্পর্ক গড়ে তোলে। সে নিজেকে বড় মাপের কবিরাজ এবং সে নিজে ৪/৫ টি জ্বীন পালন করতো বলে দাবী করে।
তার মুল লক্ষ্য ছিল দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের সহজ-সরল প্রবাসীদের স্ত্রী। মোঃ রবিউল হোসেন @ জ্বীনের কবিরাজ চট্টগ্রাম জেলার জোরারগঞ্জ থানার মধ্যম সোনা পাহাড় (বেদে পল্লী) গ্রামের মোঃ ইউনুস মিয়া এর ছেলে।
আরো দেখুন:You cannot copy content of this page